- দীনেশ
দুইটি কবিতা

শূন্য থাক কবির আসন
আমাদের প্রিয় কবি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন-----
যাওয়ার আগে আমাদের বলে যাবেন,
সেই রকমই কথা ছিল,
উনি কথা রেখেছেন—
উনি চলে যাচ্ছেন তাই , কতরকমের ব্যস্ততা
যাত্রাপথ যেন মসৃণ হয় –কোন কষ্ট যেন ছুঁতেও না পারে,
পরিষেবা হোক উচ্চমানের, সব ব্যবস্থা পাকা।
এখন শুধু গুছিয়ে দেওয়ার পালা-
নিপাট খদ্দরের পাজামা পাঞ্জাবি,
বুক পকেটের প্রিয় কলম, নোট বই, পছন্দের সুগন্ধি,
মাটির ভাঁড়ে ধোঁয়া ওঠা চা—
সঙ্গে অজস্র মানুষের ভালবাসা।
একটু সবুজ ছাওয়া বাগান, দুএকটা ফুল প্রজাপতি পাখি-
একটা পাহাড়, সঙ্গে লেপটে থাকা ঝর্ণা, না হলে ছোট্ট নদী,
একটু জল আর জলে চরে বেড়ানোর হাঁস,
জানালার মাপে কেটে রাখা এক টুকরো আকাশ
আরও আছে –ভালবাসা নেবার ও দেবার নারীদের ভিড় ।
তার ও পরে
পড়ে আছে বন্ধ ঘরে হিংসা মাখা নখ আর দাঁত,
কবির আদলে সব মুখোশের সারি—
গোপন প্রলাপ ,ব্যাভিচার, ফষ্টিনষ্টির বেসামাল রাত,
ক্ষমতার গন্ধ মাখা ভোটের টিকিট,
সুযোগ আর সুবিধায় পাল্টে নেওয়া রঙের কবির ম্যাজিক পাতাকা
যাত্রা পথে পতপত করে ওড়ে,
অন্ধকারে তার শব্দ শোনা যায়।
যাও সব শূন্য করে-
কবিও যাক,
ঝরঝর বৃষ্টিতে শূন্য থাক কবির আসন,
শরতের নীলাকাশে শূন্য থাক কবির আসন,
হেমন্তের শিশিরে শূন্য থাক কবির আসন
বসন্তে শূন্য থাক কবির আসন
বুক ময় চিতা জ্বলুক, শূন্য থাক কবির আসন,
আজ শূন্যই থাক-- শূন্যই থাক যত কবির আসন।
সাদা পোশাকের ঈশ্বর
শুয়ে আছি পাটাতনে শব্দ ছলাত ছল
ভাসমান ভাসমান আমার সাম্পান
নোনাগন্ধী নদীদের ভুলেছি ঠিকানা,
কুল আর কিনারা উধাও সবাই-
বেহুলার মান্দাসও নেই সুদূর স্বপনে
শুয়ে আছি সচেতনে শব্দ ছলাত ছল।
ছুঁয়ে আছি, ছুঁয়ে আছি পাতাল সোপান,
বামনের তিন পদ মাগে শূন্য ভুমি-
ভেসে থাকে বীজমন্ত্র ছিঁড়ে নাভিমূল
শ্যাওলার আলস্য দাঁতে কেটে কেটে
দিয়েছি উজানে মেলে পাখা-
ভাসমান ভাসমান হৃদয় যাপন।
তারপর একদিন
সাদা পোশাকের ঈশ্বর দাঁড়ালেন আমার হলুদ সকালে
কোনও ভানিতা না করে হাতে ধরিয়ে দিলেন কচু পাতায় মোড়া
নোঙরের চারা –
বললেন -“ এই নাও, অনেক হয়েছে,
ভাসবে না পুষবে----বুঝে নাও”
ভেসে আছি, শুয়ে আছি, ছুঁয়ে আছি ব্রহ্মলোক আজ ও।